নাইট্রিক অ্যাসিড এর কাজ কি?
অপর নাম – অ্যাসিডাম নাইট্রিকাম (Acidum Nitricum), বা অ্যাসিড নাইট্রিক (Acid Nitric)
যেখানে শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ও চামড়া সংযুক্ত হয়, সেইসব অংশে ঔষধটি খুব ভালো কাজ করে এবং সেখানে গোঁজ দিয়ে খোঁচা মারার মতো বেদনা হয়। গাড়িতে চড়ার সময় উপসর্গগুলি উপশম হয়। কালো বর্ণের এবং মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী।
পারদ ব্যবহারের কুফল হিসেবে উপদংশ হতে পারে।
বেদনা দ্রুত আসে ও চলে যায় (বেলেডোনা)। হাইড্রোজিনয়েড ধাতুগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত। সাইকোন্টিক দোষের ঔষধ বিশেষ।
মুখগহ্বরে, জিহ্বায় ও যৌনাঙ্গে ফোস্কা ও ক্ষত থাকে; সহজেই রক্তস্রাব হয়। মলদ্বারে ফাটা ও মলত্যাগকালে ছিঁড়ে যাওয়ার মত ব্যথা অনুভূত হয়। সমস্ত স্রাব অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত।
পুরানো রোগে কষ্ট পাওয়া এবং সহজে ঠান্ডা লাগা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। প্রচন্ড শারীরিক অস্বস্তি, সিফিলিস, গন্ডমালা, দোষ, জ্বর, যকৃতের উপসর্গ ও রক্তাল্পতা কারণে শারীরিক বিকৃতি। পাথুরি ও সন্ধিবাতের জন্য কার্যকরী।
নাইট্রিক অ্যাসিড ঔষধের চরিত্রগত লক্ষণ:
- উচ্চশক্তির ঔষধ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে রোগের উন্নতি ঘটে।
- মুখের ত্বক হলদে হয়ে যায়, দুর্বলতা ও কম্পন (বিশেষত সকালে) দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা, ক্ষত বা ত্বক চুলকালে রক্তপাত ঘটে।
- আক্রান্ত স্থানে খোঁচা দিলে ব্যথা হয় এবং সামান্য স্পর্শে ব্যথা বৃদ্ধি পায়; ব্যথা হঠাৎ আসে এবং হঠাৎ চলে যায়।
- মাটি, খড়িমাটি, শ্লেট বা পেন্সিল খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
- শরীরের সকল ধরনের স্রাব ক্ষতিকর ও দুর্গন্ধযুক্ত।
- মলত্যাগের সময় সরলান্ত্র ও গুহ্যদ্বারে ছিঁড়ে যাওয়ার মত ব্যথা অনুভূত হয়।
- অল্পতেই ঘাম আসে।
নাইট্রিক অ্যাসিড ঔষধের – মূলকথা:
মন: খিটখিটে, বিদ্বেষপূর্ণ, প্রতিহিংসাপরায়ণ, একগুঁয়ে, হতাশ। মৃত্যুভয়।
মাথা: মাথার চারপাশে বন্ধনী বা টুপির চাপে ব্যথা। মাথার চুল পড়ে যায়। মাথার চামড়া অনুভূতি প্রবণ।
কান: শ্রবণ কষ্টকর; গাড়িতে চড়ার সময় উপশম হয়। শব্দে অতিরিক্ত অনুভূতি, যেমন গাড়ির ঘড়ঘড় শব্দ সহ্য করা যায় না। চিবানোর সময় কট্কট শব্দ।
চোখ: তীক্ষ্ণ খোঁচামারার বেদনা। চোখের প্রদাহ, আলোকাতঙ্ক, অবিরাম জল পড়া। সিফিলিসজনিত কারণে উপসর্গ।
নাক: নাকে পচাক্ষত। সবুজ শ্লেষ্মা নির্গমন। সর্দি, নাসারন্ধে টাটানি ব্যথা, রক্তস্রাব। নাকের ভিতরে সূচীবিদ্ধবৎ বেদনা। ম্যাকটয়েড় ক্ষত। পুরাতন সর্দি ও হলুদ দূর্গন্ধযুক্ত স্রাব।
মুখগহ্বর: শ্বাসে পচাগন্ধ, লালাস্রাব, মাঢ়ী থেকে রক্তস্রাব। জিহ্বার কিনারায় বেদনাপূর্ণ ফুস্কুড়ি, দাঁত আল্লা, মাঢ়ী কোমল ও ফোঁপরা। মুখ গহ্বরে দূর্গন্ধ ও রক্তযুক্ত লালা।
গলা: শুষ্ক, কানের ভিতরে ব্যথা। অবিরাম গলা খাঁকারি, সাদা ক্ষতসমূহ, ঢোক গেলার সময় তীক্ষ বেদনা।
পাকস্থলী: প্রচন্ড ক্ষুধা, হজমের সমস্যা, মাটি বা খড়িমাটি খাওয়ার প্রবণতা। পাকস্থলীর উপরের অংশে ব্যথা। অজীর্ণ, প্রস্রাবে অ্যাসিড ও ফসফেটের অতিরিক্ত উপস্থিতি।
উদর: প্রচন্ড কোঁথ দেবার পর সামান্য জল নির্গত হয়। কোষ্ঠকাঠিণ্য, মলদ্বারে ফাটাসমূহ, মলত্যাগের পরে তীব্র যন্ত্রণা। অন্ত্র থেকে রক্তস্রাব, অর্শ থেকে রক্তপাত। উদরাময়, মল দূর্গন্ধযুক্ত।
প্রস্রাব: অল্প, কালচে, দূর্গন্ধযুক্ত। প্রস্রাবে শীতলতার অনুভূতি। রক্তমিশ্রিত ও অ্যালবিউমিনযুক্ত প্রস্রাব।
পুরুষের রোগ: লিঙ্গমুন্ডে ও লিঙ্গাগ্র চামড়ায় টাটানি ব্যথা, ক্ষত, জ্বালাকর অনুভূতি।
স্ত্রীরোগ: যৌনাঙ্গের বাইরের অংশে টাটানি ব্যথা, ক্ষত, প্রদর স্রাব বাদামীবর্ণ ও দূর্গন্ধযুক্ত। জরায়ু থেকে রক্তস্রাব, মাসিক ঋতুস্রাবের পরিবর্তন, কোমরে ও উরুপ্রদেশে ব্যথা।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ: দূর্গন্ধযুক্ত পায়ের ঘাম, পায়ের আঙ্গুলগুলিতে শীতস্ফোটক। হাতের তালু ও হাতে ঘাম, ঠান্ডা, নীলচে বর্ণের নখ।
চামড়া: আঁচিল, বড়ো ও খাঁজকাটা, ধোয়ার সময় রক্ত বেরোয়। চামড়ায় ফোঁটার মত বেদনা, কালো লোমকূপসমূহ।
উপশম: গাড়িতে চড়ার সময়।
সম্বন্ধ: পরিপূরক-আর্সেনিক, ক্যালেডিয়াম, থুজা, হিপার, ক্যাল্কেরিয়া।
শত্রুভাবাপন্ন: ল্যাকেসিস।
তুলনীয়: মার্কিউরিয়াস, ক্যালি কার্ব, থুজা, হিপার ও ক্যাল্কেরিয়া।
শক্তি: ৬ষ্ট শক্তি।
বিঃ দ্রঃ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্য হোমিও চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ঔষধ সেবন করুন।
( হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বই মেটেরিয়া মেডিকা হতে প্রকাশিত )