Breaking News

এস্কিউলাস হিপ

Aesculus Hip (এস্কিউলাস হিপ)

এস্কিউলাস হিপ ঔষধের চরিত্রগত লক্ষণ:

  • অর্শের সাথে পিঠের ব্যথা এবং রক্ত সঞ্চালন সমস্যার কারণে অতিরিক্ত খিটখিটে মেজাজ, মন মরা ভাব ।
  • ঘুম থেকে উঠে তখন অনুভূত হয় এক ধরনের নির্জীবতা এবং দুদোল্যমান অবস্থা।
  • মলদ্বার শুষ্ক মনে হয় এবং সেখানে ছোট ছোট কাঠির মতো বা তুষের মতো কিছু অনুভূত হয়।
  • কোমর এবং ইলিয়াক অস্থির সন্ধি স্থানে ব্যথা, সামান্য নড়াচড়ায়, নীচু হলে, উঠে দাঁড়ালে বা চললে বাড়ে।
  • হাত, বাহু, পা এবং মেরুদণ্ডের কিছু অংশে পক্ষাঘাত অনুভূত হয়।

এস্কিউলাস হিপ ঔষধটির সব অবস্থাতেই একটি বিশেষ ধরনের রক্তাধিক্য দেখা যায়, যা শৈরিক পূর্ণতা এবং দেহের নিম্নশাখা ও পুরো দেহে প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কও এর দ্বারা আক্রান্ত হয়—এই লক্ষণগুলোও লক্ষ্য করা যায়।

ইস্কিউলাসের অবস্থা মূলত ঘুমের সময় খারাপ হয়, তাই লক্ষণগুলো জাগ্রত হলে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। সে মানসিক হতবুদ্ধি নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে, ঘরের চারপাশে অসংলগ্নভাবে তাকায়, দিশাহারা হয়ে পড়ে এবং পরিচিত লোকদের চিনতে পারে না; সে আশ্চর্য হয়, সে কোথায় রয়েছে এবং যেসব জিনিস সে দেখতে পাচ্ছে তাদের মানে কী।

লাইকোপোডিয়ামের শিশুর মতো, যারা ভয় পেয়ে ও হতবুদ্ধি হয়ে জাগে, ইস্কিউলাসও তাদের জন্য উপযোগী। এই ঔষধটি অত্যন্ত বিমর্ষতা, কোপনতা, স্মৃতিহীনতা এবং কাজকর্মে অনিচ্ছা উৎপন্ন করে।

শারীরিক রক্তসঞ্চয় ও শিরার পূর্ণতা সময়ের সাথে সাথে বিশেষভাবে পরিস্ফুট হয়। এই লক্ষণগুলি শৈরিক রক্তের স্তব্ধতা এবং ঘুমালে বৃদ্ধি পায়, শুইয়ে থাকলে বাড়ে এবং শারীরিক পরিশ্রমে উপশম হয়। যথেষ্ট পরিশ্রমের পরে লক্ষণগুলি কমে যায়; চলাফেরা করলে, কিছু করলেই উপশম হয়।

যারা বুকের ধুকধুকানিতে ভোগে এবং সেই ধুকধুকানি নিচের শাখায় বিস্তৃত হয়, বা যারা ঘুমালে বুকের ধুকধুকানি শুনতে পায়, তাদের জন্য এই ঔষধটি উপযোগী।

এই ঔষধটির প্রধান কার্যকারিতা অন্ত্রের নিম্নাংশে দেখা যায়, যেখানে এটি অর্শের স্ফীত শিরা সৃষ্টি করে। এতে পিঠের ব্যথা এবং প্রকৃত কোষ্ঠকাঠিণ্যের লক্ষণ থাকে না। তীব্র যন্ত্রণা উপস্থিত থাকলেও রক্তস্রাব কম হয়। শিরার মধ্যে সারা শরীর জুড়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয় এবং শিরাস্ফীতি ধীর গতিতে ঘটে, যেমন হজম প্রক্রিয়া, হৃদপিণ্ডের সঞ্চালন এবং অন্ত্রের কাজ।

যকৃতে এবং যকৃত ধমনীতে রক্তবৃদ্ধি ও ধীরগতি কাজ, সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিণ্যও থাকে। পিঠে যন্ত্রণা অনুভূত হয়, যা রোগীকে তার স্বাভাবিক কাজ করতে বাধা দেয়। সারা শরীরে যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে, বিভিন্ন অঙ্গে পূর্ণতার অনুভূতি হয়। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী শুষ্ক ও ফোলা হয় এবং গলার ভিতর শিরাস্ফীতি দেখা যায়।

 

এস্কিউলাস হিপ ঔষধের – মূলকথা:

মাথা: অবসাদগ্রস্ত ও খিটখিটে। মাথা নিস্তেজ ও বিভ্রান্ত মনে হয়, মাথার ভিতর কন্ কন্ করে ঠাণ্ডা লাগার অনুভূতি হয়। কপালে ভারবোধ এবং বমি হতে পারে, এর পরে পেটের ডানদিকে উঁচু বেদনা।

মাথার পিছন থেকে কপাল পর্যন্ত যন্ত্রণা হয়, সঙ্গে মাথার ত্বকে থেঁৎতলানোর অনুভূতি। কপালের ডান দিক থেকে বাম দিকে স্নায়বিক সূঁচ ফোটানোর মতো বেদনা অনুভূত হয়, পরে পেটের উপর অংশে স্থান পরিবর্তনশীল যন্ত্রণা দেখা দেয়। বসে থাকলেও বা হাঁটাচলার সময় মাথা ঘোরাতে পারে।

চোখ: ভারী, উত্তপ্ত, প্রচুর জল পড়া এবং রক্তবহনলীর বিবৃদ্ধির কারণে চোখের তারায় ব্যথা।

নাক: শুষ্ক, শ্বাস নেবার সময় বাতাস ঠাণ্ডা মনে হয়, নাকের ভিতরে বাতাসের স্পর্শ অসহ্য। সর্দি ও হাঁচি হতে পারে, নাকের প্রান্তভাগে চাপ অনুভূত হয়। টারমিনেট অস্থির শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী স্ফীত ও নরম হয়, যা যকৃতের রোগের উপর নির্ভর করে।

মুখবিবর: মুখের ভিতরে জ্বালাকর অনুভূতি। ধাতব স্বাদ এবং লালাস্রাব। জিহ্বা সম্পূর্ণ লেপযুক্ত এবং মনে হয় জিহ্বা পুড়ে গেছে।

গলা: উষ্ণ, শুষ্ক, ঢোক গেলার সময় কানে সূঁচ ফোটানোর মতো ব্যথা। ফালিকিউলার ফ্যারিনজাইটিস এবং যকৃতের রক্তাধিক্য। গলবিলের শিরাগুলির স্ফীতি এবং আঁকাবাকা।

শ্বাস নেওয়ার সময় গলার ভিতরের বাতাসের স্পর্শ অসহ্য; গলার ভিতর হেজে ও সংকুচিত মনে হয়, ঢোক গেলার সময় পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি। ধাতুবন্ধ ব্যক্তির শীর্ণতা এবং গলবিলের প্রদাহের প্রথম অবস্থায়। কাশির পর দড়ির মতো মিষ্ট স্বাদযুক্ত শ্লেষ্মা উঠে।

পাকস্থলী: পাথরের মতো ভারবোধ এবং তীব্র যন্ত্রণা; সাধারণত খাবারের তিন ঘণ্টা পর এই অবস্থা দেখা দেয়। যকৃত স্থানে হাত দিলে ব্যথা অনুভূত হয় এবং পূর্ণতার অনুভূতি হয়।

উদর: যকৃতে এবং পেটের উপরের অংশে অস্বস্তিকর কণকণে বেদনা। নাভি স্থানে বেদনা এবং জন্ডিস; তলপেট ও পেলভিস স্থানে দপদপানি অনুভূত হয়।

সরলান্ত্র: শুষ্ক এবং কণকণে বেদনা। মনে হয় মলদ্বার ছোট ছোট কাঠিতে ভর্তি। গুহ্যদ্বারে হেজে যাওয়ার মতো ব্যথা যুক্ত। পায়খানার পর অধিক যন্ত্রণা, মলদ্বারের স্থানচ্যুতি। অর্শ তৎসহ কেটে ক্ষত, তীরবেঁধার মতো যন্ত্রণা, যা সারা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।

স্রাবহীন ও রক্তস্রাব যুক্ত অর্শ। ধাতুবন্ধ হওয়ার পর বৃদ্ধি। শক্ত, শুষ্ক ও বৃহৎ মল। শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী ফোলা মনে হয় এবং গুহ্যদ্বারে বাধার সৃষ্টি করে গোল ক্রিমির জন্য গুহ্যদ্বারে অস্বস্তি। গুহ্যদ্বারে পুড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি, শীতভাব পিঠের ওপর থেকে নিচের দিকে ধাবমান।

প্রস্রাব: বারবার, অল্প পরিমাণে, কালচে, মাটির মতো, গরম প্রস্রাব; বৃস্থানে বিশেষতঃ বামদিকের বৃক্ক ও ইউরেটারে বেদনা।

পুরুষের রোগ: পায়খানার সময় বীর্যপাত।

স্ত্রীরোগ: সিমফ্যাসিস পিউরিসের পিছনে সর্বদা দপদপানি; সাদাস্রাব এবং কোমরের আড়ষ্টতা যা ত্রিকাস্থি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়; কালচে-হলুদ, চটচটে স্রাব, ধাতুস্রাবের পর বৃদ্ধি।

বুক: সংকোচনের অনুভূতি। হৃদপিণ্ডে ভারবোধ এবং শরীরের সর্বাঙ্গে হৃদস্পন্দন অনুভূত হয়। কণ্ঠনালীর প্রদাহ, কাশি, যকৃতের ক্রিয়া বিকৃতির উপর নির্ভরশীল; বুকের ভিতর উত্তপ্ত বলে মনে হয় এবং অর্শ থাকলে হৃদপিণ্ডের চারপাশে ব্যথা অনুভূত হয়।

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ: অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কণকণে বেদনা বাম দিকের স্কন্ধাস্থি থেকে বাহুতে নেমে আসে; আঙ্গুলের অগ্রভাগ অবশ হয়ে যায়।

পিঠ: ঘাড়ের আড়ষ্টতা; ঘাড়ের দুই দিকের মধ্যবর্তী অংশে কণকণে বেদনা; মেরুদণ্ড দুর্বল মনে হয়; হাত-পায়ে খসে যাওয়ার মতো অনুভূতি। পিঠের যন্ত্রণা স্যাক্রাম ও হিপ জয়েন্টে আক্রান্ত হয়, যা সামনের দিকে ঝুঁকলে এবং হাঁটাচলায় বৃদ্ধি পায়। হাঁটার সময় পা দুটি ভিতরের দিকে বেঁকে যায়। পায়ের তলা ক্ষতযুক্ত, ক্লান্ত ও স্ফীত মনে হয়।

হাত ও পা: স্ফীত এবং হাত-পা ধোয়ার পর লালচে বর্ণ হয়, পূর্ণতার অনুভূতি।

জ্বর: বিকাল চারটার দিকে শীতল অনুভূতি দেখা দেয়। পিঠে শীত বোধ এবং উপরের থেকে নিচের দিকে নামে। জ্বর রাতে ৭টা থেকে ১২টা পর্যন্ত থাকে। সন্ধ্যার জ্বর, চামড়া উত্তপ্ত ও শুষ্ক; প্রচুর ঘাম ও উত্তপ্ত ঘাম।

কমা-বাড়া: সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়, হাঁটাচলার ও নড়াচড়ায় বৃদ্ধি পায়; পায়খানার সময় বৃদ্ধি; খাবারের পরে এবং বিকালের দিকে দাঁড়িয়ে থাকলে বৃদ্ধি; ঠাণ্ডামুক্ত বাতাসে উপশম হয়।

সম্বন্ধ: ইস্কিউলাস প্ল্যাবরা – তীব্র যন্ত্রণাদায়ক, কালচে-বেগুনি বর্ণের অর্শ এবং কোষ্ঠকাঠিণ্য, মাথাঘোরা এবং যকৃত ধমনীতে রক্তাধিক্য। কথা জড়ানো, গলায় সুড়সুড়ি, দৃষ্টির অস্পষ্টতা, আংশিক পক্ষাঘাত।

তুলনীয় ঔষধ: ফাইটোলক্কা (গলা শুষ্ক, মূলতঃ তরুণ রোগে); নিগানডিয়াম আমেরিকানাস (সরলান্ত্রের শিরাগুলির স্ফীততা ও অর্শ তৎসহ তীব্র যন্ত্রণা); এছাড়া এলো, কলিনসন, নাক্স, সালফার।

শক্তি: টিংচার থেকে ৩য় শক্তি।

ইথিওপস মারকিউরিফ্যালিস: এই ঔষধটি গণ্ডমানা ধাতু যুক্ত উপসর্গে, চোখের রোগে, কান-পাকায়, যন্ত্রণাদায়ক বিরক্তিকর উদ্ভেদে এবং বংশগত সিফিলিস রোগে ব্যবহৃত হয়।

চামড়া: উদ্ভেদ – মৌমাছির চাকের মতো, গণ্ডমালার মতো, হার্পিসের মতো এবং একজিমার মতো।

শক্তি: নিম্ন শক্তির বিচূর্ণ, বিশেষ করে ২x।

 

বিঃ দ্রঃ  হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্য  হোমিও চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ঔষধ সেবন করুন।

( হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বই মেটেরিয়া মেডিকা হতে প্রকাশিত )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

<script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-7254298778630529"
     crossorigin="anonymous"></script>